Descriptionশোরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ব্যবসার সাথে খেজুরের রস গুড়, পাটালি এর সম্পর্ক অনেক প্রাচীন। চিনি আবিস্কার হবার অনেক আগে থেকেই এই গুড় মানুষের মিষ্টির রসনা মেটাতো।
ইংরেজ আমলে এই গুড়ের বিকিকিনি যশোরে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। ইংরেজরা গুড় তৈরির প্রথম যান্ত্রিক কারখানা স্থাপন করে এই যশোরে। এখান থেকে এই গুড় এবং অতি অবশ্যই নীল - এই দুটি পণ্য জলপথ এবং স্থলপথে কোলকাতা চলে যেতো। সেখান থেকে জাহাজ বোঝাই করে ইউরোপে চলে যেতো। যশোরের চিরুণীও খুব বিখ্যাত ছিলো পুরো ইউরোপজুড়ে। এমনকি এখনো JESSORE ব্রান্ডের চিরুণী ফ্রান্সে চালু আছে। সবমিলিয়ে যশোরের স্থানীয় অর্থনীতিতে খেজুর গুড়ের একটি বিশাল ভূমিকা ছিলো।
তো- যশোরের ইতিহাসের সাথে এই খেজুর-গুড়ের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। যশোরের ইতিহাস সম্পর্কে যত জানার চেষ্টা করবেন তত এই খেজুরের গুড়ের প্রেমে পড়বেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মিষ্টি কম পছন্দ করি এবং ইতিহাস বেশি পছন্দ করি। যে ইতিহাসে আমার পূর্ব-পুরুষের রক্ত-ঘাম জড়িয়ে আছে সেই ইতিহাস আমাকে অমোঘ নিয়তির মতো টানে।
যারা একটু স্বাস্থ্যসচেতন তারা ইতোমধ্যেই চিনি'র ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে জানেন। ভোজ্যতেল হিসাবে আমরা সাধারনত যেসব তেল খাই এবং এই চিনি - এই দুটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকারক - তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। ঠিক এইখানেই ইতিহাস, স্বাস্থ্য এবং যশোরের অর্থনীতি এক বিন্দুতে এসে মিলেছে। আমি আমার পরিচিত এবং চারপাশের মানুষদের যশোরের এই পাটালি গুড় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করছি, এর উপকারী দিক সম্পর্কে তথ্য দিয়ে তাদেরকে এই পণ্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলছি। আমি প্রচন্ডভাবে চাই মানুষ যেনো ক্ষতিকারক চিনি বাদ দিয়ে খেজুর গুড়ে ফিরে আসে।
একই সাথে আমি যেসব গাছিদের নিয়ে কাজ করি তাদেরকে চিনি'র স্বাস্থ্যঝুকির কথা বুঝিয়ে বলি। চিনির বিকল্প হিসাবে খেজুর গুড়ের সম্ভাবনার কথা বলি। খেজুরের গুড় তাদের জন্য কতখানি আর্থিক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তা বলি এবং তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করি নুতন খেজুর গাছ লাগানোর জন্য।
তাদের হাত ধরে শুধু তাদের নয় পুরো যশোরের অর্থনীতির চাকা নুতন মোড় নিতে পারে। শুধুমাত্র আমাদের দেশে চিনির যে পরিমান ভোক্তা আছে তার অর্ধেকও যদি খেজুরের গুড়ের নিয়মিত ভোক্তা হয় তাহলে এই বাজারের যে আকার হবে তা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত নেই।
ভোক্তা বাড়লে, চাহিদা বাড়বে, সরবরাহ বাড়ানোর জন্য গাছিরা নুতন গাছ লাগাবে, যশোরের পুরানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে এই আমার স্বপ্ন। খেজুরের গুড় পাটালি নিয়ে কাজ করি নিখাদ ভালোবাসা থেকে। ভোক্তারা যখন পজেটিভ ফিডব্যাক দেয়, তারা যখন স্মৃতিকাতর হয়ে তাদের ছোটবেলার গুড়, পিঠা-পুলির কথা বলে তখন নিজের কাছেই খুব আনন্দ লাগে।
ইতিহাস, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি এই তিন পথ এক হয়ে মিলে গেছে খেজুর রসের ভাড়ে।
যশোরের সবাই যে যার অবস্থান থেকে এব্যাপারে ভূমিকা রাখবেন সেই আশা রাখি।